দরজার বেল বেজেছিল একটু পরেই । পর্দার তলার ফাঁকটুকু দিয়ে সদর দেখা যায় না; নারীকণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল- ' নমস্কার , আমি শান্তি। শান্তিলতা।' কণ্ঠস্বর ক্রমশঃ এগিয়ে আসছিল বসার ঘরের দিকে- ' আপনাদের পাড়া আমাদের আগের পাড়ার তুলনায় কত আলাদা! জানেন, ঐ মোড়ের মাথায় যেখানে অনেক দোকান টোকান - মিষ্টি কিনতে গেলাম একটু আগে- দেখি একটা কুকুরছানাকে খাওয়াচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলে- বিস্কুট টিস্কুট দিচ্ছে আর হাত নেড়ে কুকুরছানার গায়ের মাছি তাড়াচ্ছে - আমরা যেমন অতিথির খাওয়ার সময় করি আর কি- খেতে খেতে কুকুরটা তাকালো আর ছেলেটা বলল, আগে তুই খা! উনি কী বলবেন জানি না- কিন্তু এও তো এক গল্প, বলুন?' ... ...
তোমায় আমি লিখতে পারছি না, বাজার দোকান রান্নাবান্না বাসনকোসনের জঙ্গলে যেন এক বাঘ, বোঁটকা সোঁদা গন্ধের ভিতর এক নিভৃত অঞ্চল যাতে আমি শুয়ে শুয়ে বিছানায় নক্ষত্র শুঁকি, খেয়ে ফেলি তার মিষ্টি আর সুস্বাদ, টক সব গন্ধগুলো পিতলের পাত্রে রাখি,কল্পে যাবার কল্পিত... ... ...
কুমোরদের বাসস্থান কুমোরটুলী। উৎসবের চাকচিক্য, নগর কলকাতার বৈভব থেকে অনেক দূরে, শীর্ণ অলিগলি, খাপড়া ছাওয়া ঘর আর দু-একটা জীর্ণ হয়ে যাওয়া বুনো লতাপাতায় ঢাকা প্রাচীন প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ, এখানেই সৃজনের ঠিকানা। এখানেই দেবী দূর্গা মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন তিলে তিলে। এই ম্লান জনপদ, এই অপ্রশস্ত গলিপথ, এই পথিপার্শ্বের ছাউনিতে সৃষ্টি হয় এমন সব মায়াবী অবয়ব যা জন্ম দেয় এক অপার্থিব, অনিন্দ্য অনুভুতি চরাচর জুড়ে। ... ...
ছিয়াত্তরজন ড্রাগ অ্যাডিক্ট নর্দমার কাঁথে মুখ রেখে ঈশ্বর খুঁজছে; ফরফর করে আরশোলা উড়ে ধাক্কা মারছে তাদের চোখেনাকে — পুড়ে রবারের মতো নরম আর থকথকে হয়ে যাচ্ছে শিশুদের হৃৎপিন্ড; সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপে, কংক্রিটের হাড় বেরিয়ে-থাকা টাওয়ারে, পাখির বাসাতে বসে তিনজন স্নাইপার টার্গেট প্র্যাক্টিস করছে তাদের মেরুন খেলনাগুলির ওপর। হিরোশিমার হলদে পর্নোগ্রাফিক ফুটেজ থেকে গলে গড়িয়ে নামছে তেজস্ক্রিয় পাকস্থলী, দেখতে দেখতে ছিয়াত্তরজন কবি মাস্টারবেট করছে বিবর্ণ নীল বিন্দুটার গায়ে; আলের ধারে বসে জলের ওপর ঝুঁকে যে চাষী ফানুস দেখছে, আজ রাতে ফলিডল খাবে। ... ...
শ্রীধর তো মানুষই না। সে তো তার থেকে হায়ারার্কিতে অনেক অনেক নীচে। মধ্যিখানে আছে নাজির টাকলুবাবু, মানে শ্রী নিশিকান্ত পরিজা, যিনি রঙিন পর্দা থেকে রেফ্রিজারেটর নাজিরিপনা করে ম্যাডামের সামনে দাখিল করবেন। বিশাল চুনকাম করা বাংলোর প্রতি ঘরে তীব্র চুনকামের গন্ধে মাথা ধরে যায়। তিনটে বাথরুম-পায়খানার একটা পায়খানায় এক-একদিন হেগে দেখা যায় তিনটের মধ্যে দুটোরই নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্লাশ করলে মল যাচ্ছে না। সে কী ট্রমা, আবার ফোন করে পারিজাকে ঝাড়ে সু। প্লাম্বার ডাকে পারিজাবাবু। ওভারহেড ট্যাংকি থেকে জল ঝরছে তো ঝরছেই। বেওয়ারিশ কুকুরে বেড়ালে বাড়িতে এসে যেখানে সেখানে বসে থাকছে। ইঁদুরেরা সোফার ভেতরে বাসা করে সমস্ত স্পঞ্জ গদি কুটিকুটি করে ফেলছে। ... ...
গত শতকের শেষ আর চলতি শতকের শুরুর দিকে কলকাতা ও আশপাশের মফস্সলে রাতারাতি প্রায় স্ক্র্যাপের দরে বিক্রি হয়ে যেতে থাকল লেটারপ্রেসগুলি, তার জায়গায় ভুঁইফোঁড়ের মতো গজিয়ে উঠল ডিটিপি ইউনিট। আপাতভাবে মনে হবে, তাতে তো ভালোই হল। ঠিক, কিছু ভালো হলও। মুদ্রণের শ্রম কমল, সময় কমল, হয়তো খরচও খানিক কমল। প্রযুক্তির যে ব্যবহারিক সুফলগুলি অবশ্যকাম্য। কিন্তু এই যে মুদ্রণ ব্যাপারটিকে ‘আপাতভাবে’ বেশ সহজ মনে হতে লাগল, মনে হতে লাগল চাইলেই ছাপাছাপির ছোটোখাটো ব্যাবসা শুরু করে ফেলা যায়, এমনকী পাঞ্জাবি পরে সম্পাদক বা প্রকাশকও হয়ে ওঠা যায় বেমালুম, তাতে ঠিক কী কী ক্ষতি হল বাংলা বাজারে, তা আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো একটু অশ্লীলই হবে। সে-প্রসঙ্গ থাক বরং। তবে, গ্রুমড হওয়ার, শিক্ষানবিশি করার, হাতে-কলমে কাজ শেখার প্রসঙ্গ যে একপ্রকার উঠেই গেল, তা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায়। ... ...
তা, চিত্রাদি তো দুই হাত নেড়ে “কাট কাট” বলতে বলতে হেলেদুলে এসে ধাঁই ধপ্পাস করে একটি চেয়ারে বসলেন, চেয়ারের অসহায় প্রতিবাদ ও মেয়েদের নীচু গলায় সম্মিলিত হতাশার শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল। আর অন্যদিক থেকে ছাত্রীদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে ভীষণ গনগনে মুখে তেড়েমেড়ে উঠলেন পরিচালিকা অপর্ণাদি – “আপনি কাট কাট বলে হঠাৎ এইরকম চ্যাঁচালেন কেন ? দিব্যি হচ্ছিল তো” “দিব্যি হচ্ছিল? অই অর্জুন গানের সঙ্গে এত এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল কেন? বেজায় ওভার অ্যাকটিং তো। রোজ বলি,আমি চাই সংযত,সুন্দর অভিনয় –” “অর্জুন কোদ্দিয়ে এল? সে তো চিত্রাঙ্গদায় ছিল, গতবছর হয়ে গেছে। তাসের দেশে অর্জুন?” ... ...
৩০০ বছরের মধ্যে শল্য চিকিৎসার ধারা আয়ুর্বেদের মূল ধারা থেকে হারিয়ে যায়। এ জ্ঞান কালের স্রোতে এবং ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে জমা হয়ে থাকে নাপিত, কুমোর বা কামার সহ অন্য বর্গের মানুষের মাঝে। ফ্রান্সিস জিমারম্যান তাঁর “Terminological Problems in the Process of Editing and Traslating Sanskrit Medical Texts” প্রবন্ধে বলছেন যে শুধু এটুকু আমাদের মাথায় রাখলে চলবেনা যে সুশ্রুত-সংহিতা এবং চরক-সংহিতা-র দৃঢ়বদ্ধ টেক্সট হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ১০ থেকে ১৫ শতাব্দী লেগেছে এবং মধ্যযুগের বিভিন্ন ভাষ্য এতে যুক্ত হয়েছে, এর সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে এত দীর্ঘ সময়কালে সমষ্টিগত চিন্তার জগতে প্রচুর ভাঙ্গাচোরা এবং পরিবর্তন ঘটেছে। ... ...
শিউলিকে বোঝাতে পারি না, যা দেখি তা নয়—সত্য তাই যা আমরা দেখি না। সে তখন হো হো করে হাসে। বলে, তুমি সেই তেমনি রয়ে গেলে—আগের মতই। পাল্টালে না, বদলালে না—এমন লোককে নিয়ে আর পারি না। ওকে বলি, এমন কথা তো ছিল না শিউলি। কথা ছিল, তোমাকে একটি নদী উপহার দেব। সঙ্গে একটি নৌকা। নদীতে ভেসে যাবে নৌকা, জলের উপর সূর্যাস্তের আলো—এমতাবস্থায় কত পাখি উড়ে যেতে পারে আকাশ দিয়ে—কল্পনা করে দ্যাখো একবার। ও বলে, আমি কল্পনা করতে পারি না। তুমি যা তোমাকে আমি তাই দেখি। দেখি শুনি, একা-একা কথা বলি। তার মধ্যে নদী নেই, সূর্যাস্ত নেই, নৌকা নেই। মাটির দোতলাবাড়ি’র পিছনে আমাদের চাষজমি। আমরা সেখানে মৌরি চাষ করি। ধনে আর জিরে। এই যে চাষজমি, এই যে চাষজন্ম—যেন তা আমাদের হাতে আছে অনন্তকাল। চাষ করতে করতে আমরা যখন সেই মাটির নীচে চলে যাই—দেখি সেখানে প্রাচীন জ্যোৎস্নাসকল পড়ে আছে। আর আমি অবাক হয়ে যাই শিউলির কথায়। এই তো কী সুন্দর কবিতার মত কথা বলে সে, কবিতার মতন চলন তার—কবিতার মত জীবন। অথচ সে বলে, আমি কবিতা লিখতে পারি না, কারণ আমি তা লিখিনি কখনও। কবিই সত্য আর জগত মিথ্যে—একথা তাকে বোঝাতে পারি না। সে একপাক ঘুরে গিয়ে বলে, ওসব হল তোমার কল্পনা। কবি হয়েই হয়েছে তোমার মুসকিল। জানো তো, কবিরা গজদন্তমিনারে বাস করে? আবোলতাবোল লেখে—আসলে ওসব কোনো কবিতাই নয়! অবাক হয়ে বলি, এসব কী বলছ তুমি শিউলি? জানো আমি কী ঠিক করেছি? এই গোটা ডিসেম্বর মাসটা তোমাকে উপহার দিতে চাই। একী কম কথা হল? হাত উল্টে শিউলি বলে, ঠিক আছে, দিলে না-হয়—কিন্তু তার পর? এই গোটা ডিসেম্বর নিয়ে আমি কী করব? ডিসেম্বরের সমস্ত শিশির আমার গায়ের উপর ঝরবে। সমস্ত শীত আমাকে কাঁপাবে। প্রজাপতিরা আমার গায়ে বসবে। বলো, তখন আমি কী করব? ... ...
এবার পুজোয় চলুন তেপান্তর। দেখুন তেপান্তরের দুর্গাপুজো। বাংলার গ্রামীণ দুর্গোৎসবের সাবেক চেহারাটি ফুটে উঠবে আপনার চোখের সামনে। মনে পড়বে বাড়ির বড়দের কাছ থেকে শোনা, পালকি নিয়ে কলাবৌ স্নান, আরতি, ভোগ, অঞ্জলি, সিঁদুর খেলা এবং বিসর্জন মিলিয়ে পুজোর চেনা ছবিটি। মন্ডপ সংলগ্ন মাঠে বাউল-ফকিরি গান, ছৌ নাচের সঙ্গে থাকবে পুরনো দিনের পুজোর সান্ধ্য অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অঙ্গ থিয়েটার। ভোগ ছাড়াও অতিথিদের জন্য রয়েছে খাওয়াদাওয়ার এক আন্তরিক আয়োজন। ছড়ানো সবুজ আর নানারকম পাখির ডাক আপনার মন ভালো করে দেবে। অজয় নদের তীরে সাদা বালির প্রান্তর এখন কাশফুলে ঢাকা। কাছেই রয়েছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষিত ইছাই ঘোষের দেউল। ইতিহাস পাগল মানুষেরা চলে যেতে পারেন সেখানেও। ৪একর জোড়া এলাকায় ছড়ানো ছোট ছোট কটেজে অতিথিদের থাকার চমৎকার ব্যবস্থা। এমনিতে এখানে প্রায় ১০০ জন অতিথি থাকতে পারেন। তবে পুজোর সময় ভিড় এড়াতে এখানে ৬০জন পর্যটকদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দশমীর দিন স্থানীয় আদিবাসীদের দাঁসাই পরব। দেখুন তাদের দাঁসাই নাচ, শহুরে সংস্কৃতি পেরিয়ে এক অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। ঘরে ফিরলেও তেপান্তর জেগে থাকবে আপনার অন্তরে। ... ...
‘বউদি অত টাকা পাবে কোথায়—।’ ‘বউদি আর পাবে কোথায়!’ মানিক হাসে, ‘বউদির অনেক কাজের বাড়ির বাবু ধরা আছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচ দশ করে কালেক্ট করবে। মাসে মাসে আমি দিলে তাদের শোধ করে দেবে। আর সুদটা বউদির পকেটে ঢুকবে। প্ল্যান আমার ছকা ছিল। ওই হারামির বাচ্চা বাবু সাহা সব লাগিয়ে দিল মল্লিক ঠিকেদারকে। নইলে আমার সব প্ল্যান পাক্কা।’ মানিক আবারও হাসল। ‘আমাকে চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি চলে এল—থানায় গেল না। চুরির মাল খুঁজল না। শুধু হল্লা, নে সাহস থাকে আমাকে পুলিসে দে। দু দুটো টুলু পাম্প, আচ্ছা আমিও ছাড়ব না। ওরা ভয় পেয়ে গেছে রূপা বুঝেছে—আমি যদি ঠিকেদারি লাইনে নামি ওরা আমার সঙ্গে পারবে না।’ রূপার মনে হল, মানিক ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি সত্যি চুরি হলে ওরা থানা পুলিশ করত না—ছেড়ে দিত? কেউ ছেড়ে দেয়? ... ...
কৌশিক বাজারীর চারটি কবিতা ... ...
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে। চোখের সামনে আকাশ ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে ওঠে। আলতা রঙের পোঁচ পড়ে তার উপর। শুধু জনারণ্যে কিছু ঘুড়ি, পাখিদের প্রতিনিধি। গঠন নয়, ঘুড়ি চেনা যায় তার উড্ডয়ন-কৌশলে। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে চাক চাক ধোঁয়া, যেন নোয়াঠাকুমার আর্তি, খুঁজে নেয় আলপথ—ফরিদপুর। তাদের গতিপথ বিভ্রান্ত সরল, অর্থাৎ বক্র। গুলের আঁচ ওঠা উনুন—খানিক উপরে বুড়ির দু'টো চোখ আর ফুলে ওঠা টিকোলো নাক এক প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে, যা আকারে ক্রমশ বড় হতে থাকে। মাথার ভিতর শৃঙ্খলিত ধ্বনি, রঙ আর হঠাতই কালো হয়ে ওঠে আকাশ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, সব সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্য এই রাত, তার বেদনা, যা কেবল অনুবাদে সাবলীল... কুকুরেরা জেনে গেছে সব। সন্ধ্যার আজান আর মিলিটারি রুট মার্চ পরপর শুনে নমনীয় করে তোলে নিজেদের। স্থির হয়। সঙ্গম স্থগিত রাখে আজ। ... ...
মানসের গলায় কী কিছু উত্তেজনা ! তার হাতের সংকেতে মাথা ডাইনে বাঁয়ে ঘোরায় রিণি। সত্যি বাঁ দিকে বিশাল বেনাবনের কতো কিলোমিটার ভেতরে কে জানে দেখা যাচ্ছে এক ভৌতিক উচ্চতা। যেন এই রোদের আঁচে দূরবর্তী নদীর দিক থেকে ছুটে আসা উষ্ণ বাতাসে লি লি করে কাঁপছে সেই মন্দিরের চূড়ো। রিণি আর তার মাঝখানের প্রান্তর জুড়ে শক্ত মোটা বেনাঘাস। সে শুনতেই ঘাস,দেখতে সরু বাঁশের মতোই গুল্ম,শক্ত আর ছুঁচলো। ভেদ করে যাওয়া এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইয়াকুব বলল,বাগালরা গরু চরাবার অসুবিধের জন্য প্রায়ই নাকি শুকনো বেনাঘাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তা হলে অবশ্য অতটা দুর্ভেদ্য হবে না। ... ...
টেবিলে আমার স্ত্রী সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করল, “শ্রাবন্তী কে?” আমি অবাক হয়ে গেলাম এই প্রশ্নে। আমিও জিজ্ঞেস করলাম, “শ্রাবন্তী কে?” এবং এরপরেই আমার মনে পড়ল শ্রাবন্তী কে। এ নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হতে লাগল। আমি আমার বউকে বোঝাতে পারছিলাম না যে শ্রাবন্তী আমার লেখার একটা চরিত্র। লেখার ড্রাফট দেখিয়েও আমি তাকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। সে বলল, অনেকবার সে বেইজমেন্টে এসে দেখেছে আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলছি। তার কথা মিথ্যে নয়। আমি এরকম অনেক কথা বলেছি ওই মেয়ের সাথে। এবং সৎ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ওই মেয়ের প্রতি আমার বড়ো রকম দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। কারণ সে ঠিক আমার মনের মতো। এটা কি আমার লেখার চরিত্র সেই জন্যে? কেবল লেখার চরিত্র হলে সে কীভাবে উঠে আসবে? এইভাবে হাসবে, আর আমার পাশে বসে আমারই লেখা নিয়ে এমন সব কথা বলবে যা আমি নিজেও কখনও ভাবিনি? এসব নিয়ে আমি নিজেও দ্বিধায় ছিলাম। এর মধ্যে শুরু হল বউয়ের সাথে ঝামেলা। ... ...
আমাদের ছেলেবলায় যখন দূর থেকে দেখতাম দুটি ছেলে আসছে তখন কথা না বলেই তাদের শিক্ষা দীক্ষা টের পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিলো ছোটো ঢিল ছুঁড়ে মারলেই যে উঃ বলতো সে পাতি বাংলা মিডিয়াম, আর আউচ বললে জানতাম এ তো কোনো সেন্ট মার্কা স্কুলের ছেলে। ৭১' বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলে পিলে এসেছিলো এপাড় বাংলায়। একটা বড় গ্রুপের সাথে আলাপ হয়েছিলো। নাম বলতেই সহাস্যে ঝুঁকে পড়ে হ্যান্ড শেক করে জিগালেন 'আপনি কেমন আছেন'? আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই, বলি পেট কামড়াচ্ছিলো, ভুটভাট, তো এখন ভালো আছি। তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ওম্মা, দ্বিতীয় ও তৃতীয়্জনও একই কায়দায় আলাপ করার পর টের পেয়েছিলাম উটি আসলে হাঊ ড্যু উ ড্যুর বাংলা সংস্করণ। এখন বোধহয় তাও নেই। উদাসীন হাই আওয়াজ ওঠে দু পক্ষেই। নমস্কার আর কে কবে করে? ... ...